বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ৪র্থ ওয়াজ

বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ৪র্থ ওয়াজ

বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ৪র্থ ওয়াজে সকলের উদ্দেশ্যে বলেনঃ যখন তুমি পার্থিব সংসার ও তার আনুসঙ্গিক বস্তুনিচয় থেকে মৃর্ত্যুবরণ তথা বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করবে, তখন আল্লাহর দরবার থেকে তোমাকে সম্বোধন করে ঘোষণা করা হবে, আল্লাহ পাক তোমার উপর মেহেরবানী করুন এতে তোমার সব রকমের কামনা বাসনা দুর হয়ে যাবে। তখন আবার তোমাকে লক্ষ করে বলা হবে, আল্লাহ পাক তোমার উপর দয়া করুণ এবং তোমাকে যাবতীয় পার্থিব ইচ্ছা-আকাঙ্খা থেকে নিবৃত্ত রাখুন। তারপর যখন তুমি ঐরুপ ইচ্ছা আকাঙ্খা থেকে পবিত্র হয়ে যাবে, তখন আবার তোমাকে লক্ষ্য করে বলা হবে, আল্লাহ পাক তোমার উপর মেহেরবান হোন এবং তিনি তোমাকে অনন্ত জীবন প্রদান করুন। অনন্তর যখন তুমি ঐ পর্যা্য় উপনিত হবে, তখন তুমি এরুপ জীবন লাভ করবে, য়ারপর আর কোন দিন তোমাকে মৃর্ত্যু স্পর্শ করবে না। তুমি এরুপ সচ্ছলতা লাভে ধন্য হবে যে, তারপর আর কোন দারিদ্রের অভিশাপ ভোগ করতে হবে না। তুমি এরুপ দানের পাত্র হবে যে, তারপর আর কখনও সে দান থেকে বাঞ্চিত হবে না। তুমি এরুপ সন্তষ্টি অর্জন করবে যে, তারপর আর কখনও তোমাকে অসন্তষ্টির শিকার হতে হবে না। তুমি এরুপ নিয়ামত (সম্পদ) সুখ-সাচ্ছন্দের অধিকারী হবে যে, তারপর আর কখনও তুমি সে সুখ-সম্পদ হারা হবে না। তুমি এরুপ জ্ঞানের আধার হবে যে, তারপর আর কখনও তোমাকে অজ্ঞানতার তিমিরে নিমজ্জিত হতে হবে না। তুমি এরুপ নিস্কন্টক ও নির্বিঘ্ন অবস্তা প্রাপ্ত হবে যে, তারপর আর কখনও তুমি কোনরুপ তিক্ত বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হবে না। তুমি এরুপ সৌভাগ্য অর্জন করবে যে, তারপর আর কখনও তোমাকে দূর ভাগ্যের কবলিত হতে হবে না। তুমি এরুপ সম্মান ও মর্যদা লাভ করবে যে, তারপর আর কখনও তোমাকে অপমানিত ও অপদস্হ হতে হবে না। তুমি এরুপ নৈকট্য সান্নিধ্যপ্রাপ্ত হবে যে, তারপর আর কখনও তোমাকে দুরত্ব বা বিচ্ছিন্নতার জ্বালা পোহাতে হবে না। তুমি এরুপ উন্নত স্তরে অধিষ্টিত হবে যে, তারপর আর কখনও তোমাকে অবনতির দিকে ধাবিত হতে হবে না। তুমি এরুপ মহত্ত লাভে ধন্য হবে যে, তারপর আর কখনও তোমাকে হেয়তার কলুষ স্পর্শ করবে না। তুমি এরুপ নিরঙ্কুশ পবিত্রতা লাভ করবে য়ে, তারপর আর তোমার মাঝে অপবিত্রতার জেরটুকুও লাগতে পারবে না। অর্থাৎ মানবীয় প্রকৃতির সাভাবিক কার্যটুকুও তোমা থেকে দুর হয়ে তুমি স্হির অম্লান ও বিমলিন হয়ে যাবে। তারপর তোমার তধ্যে আল্লাহ পাকের ছেফাতি গুণাবলীর জ্যোতিরাজি বিকাশ প্রাপ্ত হবে, তারপর লোকগণ তোমার সকাশে যা কিছু চাইবে তাই তারা পেয়ে যাবে। তখন তারা তোমার যে প্রশংসা করবে তা সবই যথাযথ হবে। এই পর্যায়ে পৌঁছায় পর ত্রুমান্বয়ে তুমি মর্য্দার এমন এক স্তরে আরোহণ করবে যে, সাধারণ লোকেরা তোমার মর্য্দার পরিমাণ অনুধাবনেও সক্ষম হবে না। তখন তোমার মর্যদা এমন এক অতুলনীয় স্তরে পৌছে যাবে যে, তোমার সমশ্রেণীর আর কাউকেই পাওয়া যাবে না। এসময় তুমি মহান নবী ও ছিদ্দীকগণের প্রকৃত রুহানী প্রতিনিধিত্ত্ব অর্জন করবে। তোমার উপর তখন বেলায়েতের মহা মর্যদা ও পূর্ণ ক্ষমতা অর্পিত হবে। তোমার থেকে ফয়েজ লাভের লক্ষ্যে আবদালগণ আনাগনা শুরু করবে। তোমার শুভ দৃস্টির উছিলায় তখন মানুষের কষ্ট দুরীভূত হবে। তোমার দোয়ায় আল্লাহর করুণা সৃষ্টির উপর বর্ষিত হতে থাকবে। তোমার প্রার্থনার দরুন সহসাই বৃষ্টিপাত শুরু হবে। তোমার নেক দোয়ার বরকতে দুনিয়ার রাজা-বাদশাহ, দীন-দুঃখী, আলিম-অলী-দরবেশ, পাপী-তাপী সর্বশ্রেণীর লোক যাবতীয় সঙ্কট ও সমস্যামুক্ত হবে। এই পর্যায়ে তুমি একদিক থেকে জগতের সৃষ্টিকুলের উপর এক মহান রাজাধিরাজের ভূমিকায় নিয়োজিত হবে। জ্বিন মানব থেকে শুরু করে যাবতীয় জীবকুল তোমার দ্বারা নানাভাবে ফায়দা লাভ করবে। মানুষ ও পশু-পাখী সবাই তোমার দরবারে ভীড় করে থাকবে। এসময় তোমার এতটুকু খেদমত করার সুযোগ লাভ করতে পারলে যে কেউ নিজেকে ধন্য মনে করবে। সর্বশ্রেনীর মানুষ এসময় তোমার প্রশংসা এবং গুণগান প্রচারে আত্মনিয়োগ থাকবে। কোন মুমিন মুসলমানই তোমার কামালিয়াত এবং বুযুর্গীর ব্যাপারে মতভেদ করবে না। যে ব্যক্তি এরুপ সৌভাগ্য অর্জন করবে, সে মহা সৌভাগ্যবান ও পরম সুখী, তার জীবন ধন্য। এটা শুধু আল্লাহর একান্ত কৃপা ও অনুগ্রহেই সম্ভব হবে। তিনিই কৃপা ও অনুগ্রহের একমাত্র মালিক।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন