বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ৩য় ওয়াজে বলেন : সাধারনত মানুষ যখন বিপদাপন্ন হয়, তখন সে সর্বপ্রথম তার নিজের শক্তির দ্বারা বিপদমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। যদি সে নিজ শক্তির দ্বারা উদ্যেশ্য সাধনে সফল না হয়, তখন অন্য কোন মানুষের কাছে সাহায্য প্রার্থী হয়। যেমন কোন রাজা-বাদশাহ প্রতাপশালী বা ধনবান ব্যাক্তির কাছে ধর্ণা দিয়ে থাকে। কারও কোনরুপ রোগ-ব্যাধি হলে ডাক্তার-কবিরাজ বা চিকিৎসকের সরণাপন্ন হয় শেষ পর্যন্ত যদি এদের দ্বারা বিপদাপদ, সঙ্কট-সমস্যা বা রোগ-ব্যাধির নিরসন না হয়, তখন সে ব্যাকুলভাবে কাকুতি-মিনতি করে আল্লাহ পাকের দরবারে উপস্হিত হয়, মানুষের প্রকৃতিই এটা যে, যতক্ষন কোন সমস্যা থেকে নিজ চেষ্টায় উদ্ধার পেতে পারে, ততক্ষন সে অন্য লোকের শরনাপন্ন হয় না এবং যতক্ষণ কোন মানুষ তার সমস্যা দুর হবে মনে করে ততক্ষণ সে আল্লাহপাকের দরবারে এজন্য প্রার্থ্না করেনা। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, মানুষ আল্লাহ পাকের পরিচয় জ্ঞান রাখে না। যদি রাখত, তাহলে সর্ব্প্রথমই সে আল্লাহর দরবারে হাজির হতো। উল্লিখিত মানুষের প্রকৃতিসুলভ রীতিতে সর্বশেষে যখন সে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে প্রার্থ্না করে, তখন সেখানেও কোনরুপ ফল না পেয়ে মানুষ তখন আল্লাহর কাছে আত্ম সমর্পন করে পুর্ণ ভরসা ও আস্হা হৃদয় নিয়ে সেই পাক দরবারে আকুল প্রার্থনায় লিপ্ত হয়ে যায়। আল্লাহ তখন তাঁর ঐ বান্দাকে পূর্ণ নিখুঁত করার লক্ষ্যে সহজে তার প্রার্থনার প্রতি কর্ণপাত করেন না। পরিশেষে দিশেহারা বান্দা তার যাবতীয় পার্থিব মোহ ছিন্ন করে আল্লাহর দরবারে রোনাজারী শুরু করে, যাতে করে বান্দার অন্তরে তকদীরের প্রভাব বিস্তার লাভ করে এবং আল্লাহর নির্দেশ তার মাঝে কার্য্কর হয়, বান্দা যাবতীয় উছিলা এবং অবলম্বনাদির মোহ মুক্ত হয়ে পার্থিব যে কোন বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মোট কথা তখন বান্দার শুধুমাত্র আত্বা ব্যতিত অন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা, বান্দা তখন আহার নিদ্রা সবকিছু ভুলে যায়, এমনকি তার মানবীয় স্বভাব ও গুণাবলী সে তখন সম্পুর্ণরুপে বিস্মৃত হয়ে যায়। তার কলবে তখন শুধু আল্লাহর যিকির ছাড়া কিছুই থাকে না। সে তখন দুনিয়ার যে কোন বস্তু ও বিষয়ের মাঝে কেবল মাত্র আল্লাহর সত্তা ও নিদর্শন ছাড়া কিছু দেখে না তখন ও বান্দা প্রকৃতপক্ষে মনে-প্রাণে এরুপ মুমিন হয়ে যায় য়ে, তার অন্তর থেকে বলে উঠে যে, জগতের কোন কিছুই আল্লাহর ইঙ্গিৎ কুদরত ছাড়া হয়নি, হচ্ছেনা এবং হবেও না। আল্লাহর পাকের শক্তি ব্যতীত কোন কিছুই এতটুকু মাত্র হেলতেও পারে না। জাগতীক যাবতীয় কার্যকারক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ পাকের ক্ষমতা ব্যতীত ভাল বা মন্দ পরাজয়, লাভ বা লোকসান, আলো বা অন্ধকার, রোগ না নিরোগ, জীবন বা মরণ, মান অপমান, দিবা বা রাত, সচ্ছল বা কাঙ্গাল কোন কিছুই হতে পারে না। এক কথায় এমতাবস্হায় বান্দা সম্পূর্ণ আল্লাহওয়ালার অর্থা্ৎ বান্দা ফানাফিল্লাহ হয়ে যায়। ধাত্রীর ক্রোড়ে যেমন অবোধ শিশু, গোসলদাতার হাতে যেমন মৃতদেহ, ঠিক তেমনই সেই বান্দাও আল্লাহর কুদরতের হাতের ক্রীড়নক হয়ে যায়। এমতাবস্হায় বান্দার মধ্যে নিজের বা পরের জন্য কোন কিছু করবার এতটুকু মাত্র ক্ষমতা থাকে না। বান্দার অবস্হা তখন এমন হয়ে যায় যে, আল্লাহর কার্যকলাপ ছাড়া সে আর কোন কাজই দেখে না, আল্লাহর বাক্য বা আওয়াজ ছাড়া সে আর কারও বাক্য বা আওয়াজই শুনে না। আল্লাহ পাকের জ্ঞান ছাড়া আর কারও মাঝে সে কোনরুপ জ্ঞানই দেখে না। যদি কারও আওয়াজ তার কানে আসে তা আল্লাহর আওয়াজ, যদি কোন কাজ তার চোখে আসে, তা আল্লাহর কাজ। যদি কোন জ্ঞানে সে জ্ঞানী হয়, তা আল্লাহর জ্ঞান। সে আল্লাহ প্রদত্ত বস্তুর দ্বারা ধন্য হয় এবং আল্লাহ প্রদত্ত গুণাবলীর দ্বারা গুণাণ্বিত হয়। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সে সুখী হয় অপরের সংস্রবকে সে অসুখকর মনে করে । আল্লাহর উপর ভরসা করে। আল্লাহর পরিচয় জ্ঞানের আলোকে সে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ পাকের জাত ও হেদায়েতের গুপ্ত তত্তরাজি তার আয়ত্ত হয়ে যায় এবং উল্লিখিত গুণাবলীর দ্বারা বিভূষিত হয়ে সে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে ও তাঁর হামদ এবং প্রশংসায় আত্মনিয়োগ করে।
বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) ৩য় ওয়াজে বলেন : সাধারনত মানুষ যখন বিপদাপন্ন হয়, তখন সে সর্বপ্রথম তার নিজের শক্তির দ্বারা বিপদমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। যদি সে নিজ শক্তির দ্বারা উদ্যেশ্য সাধনে সফল না হয়, তখন অন্য কোন মানুষের কাছে সাহায্য প্রার্থী হয়। যেমন কোন রাজা-বাদশাহ প্রতাপশালী বা ধনবান ব্যাক্তির কাছে ধর্ণা দিয়ে থাকে। কারও কোনরুপ রোগ-ব্যাধি হলে ডাক্তার-কবিরাজ বা চিকিৎসকের সরণাপন্ন হয় শেষ পর্যন্ত যদি এদের দ্বারা বিপদাপদ, সঙ্কট-সমস্যা বা রোগ-ব্যাধির নিরসন না হয়, তখন সে ব্যাকুলভাবে কাকুতি-মিনতি করে আল্লাহ পাকের দরবারে উপস্হিত হয়, মানুষের প্রকৃতিই এটা যে, যতক্ষন কোন সমস্যা থেকে নিজ চেষ্টায় উদ্ধার পেতে পারে, ততক্ষন সে অন্য লোকের শরনাপন্ন হয় না এবং যতক্ষণ কোন মানুষ তার সমস্যা দুর হবে মনে করে ততক্ষণ সে আল্লাহপাকের দরবারে এজন্য প্রার্থ্না করেনা। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, মানুষ আল্লাহ পাকের পরিচয় জ্ঞান রাখে না। যদি রাখত, তাহলে সর্ব্প্রথমই সে আল্লাহর দরবারে হাজির হতো। উল্লিখিত মানুষের প্রকৃতিসুলভ রীতিতে সর্বশেষে যখন সে আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে প্রার্থ্না করে, তখন সেখানেও কোনরুপ ফল না পেয়ে মানুষ তখন আল্লাহর কাছে আত্ম সমর্পন করে পুর্ণ ভরসা ও আস্হা হৃদয় নিয়ে সেই পাক দরবারে আকুল প্রার্থনায় লিপ্ত হয়ে যায়। আল্লাহ তখন তাঁর ঐ বান্দাকে পূর্ণ নিখুঁত করার লক্ষ্যে সহজে তার প্রার্থনার প্রতি কর্ণপাত করেন না। পরিশেষে দিশেহারা বান্দা তার যাবতীয় পার্থিব মোহ ছিন্ন করে আল্লাহর দরবারে রোনাজারী শুরু করে, যাতে করে বান্দার অন্তরে তকদীরের প্রভাব বিস্তার লাভ করে এবং আল্লাহর নির্দেশ তার মাঝে কার্য্কর হয়, বান্দা যাবতীয় উছিলা এবং অবলম্বনাদির মোহ মুক্ত হয়ে পার্থিব যে কোন বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মোট কথা তখন বান্দার শুধুমাত্র আত্বা ব্যতিত অন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকেনা, বান্দা তখন আহার নিদ্রা সবকিছু ভুলে যায়, এমনকি তার মানবীয় স্বভাব ও গুণাবলী সে তখন সম্পুর্ণরুপে বিস্মৃত হয়ে যায়। তার কলবে তখন শুধু আল্লাহর যিকির ছাড়া কিছুই থাকে না। সে তখন দুনিয়ার যে কোন বস্তু ও বিষয়ের মাঝে কেবল মাত্র আল্লাহর সত্তা ও নিদর্শন ছাড়া কিছু দেখে না তখন ও বান্দা প্রকৃতপক্ষে মনে-প্রাণে এরুপ মুমিন হয়ে যায় য়ে, তার অন্তর থেকে বলে উঠে যে, জগতের কোন কিছুই আল্লাহর ইঙ্গিৎ কুদরত ছাড়া হয়নি, হচ্ছেনা এবং হবেও না। আল্লাহর পাকের শক্তি ব্যতীত কোন কিছুই এতটুকু মাত্র হেলতেও পারে না। জাগতীক যাবতীয় কার্যকারক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ পাকের ক্ষমতা ব্যতীত ভাল বা মন্দ পরাজয়, লাভ বা লোকসান, আলো বা অন্ধকার, রোগ না নিরোগ, জীবন বা মরণ, মান অপমান, দিবা বা রাত, সচ্ছল বা কাঙ্গাল কোন কিছুই হতে পারে না। এক কথায় এমতাবস্হায় বান্দা সম্পূর্ণ আল্লাহওয়ালার অর্থা্ৎ বান্দা ফানাফিল্লাহ হয়ে যায়। ধাত্রীর ক্রোড়ে যেমন অবোধ শিশু, গোসলদাতার হাতে যেমন মৃতদেহ, ঠিক তেমনই সেই বান্দাও আল্লাহর কুদরতের হাতের ক্রীড়নক হয়ে যায়। এমতাবস্হায় বান্দার মধ্যে নিজের বা পরের জন্য কোন কিছু করবার এতটুকু মাত্র ক্ষমতা থাকে না। বান্দার অবস্হা তখন এমন হয়ে যায় যে, আল্লাহর কার্যকলাপ ছাড়া সে আর কোন কাজই দেখে না, আল্লাহর বাক্য বা আওয়াজ ছাড়া সে আর কারও বাক্য বা আওয়াজই শুনে না। আল্লাহ পাকের জ্ঞান ছাড়া আর কারও মাঝে সে কোনরুপ জ্ঞানই দেখে না। যদি কারও আওয়াজ তার কানে আসে তা আল্লাহর আওয়াজ, যদি কোন কাজ তার চোখে আসে, তা আল্লাহর কাজ। যদি কোন জ্ঞানে সে জ্ঞানী হয়, তা আল্লাহর জ্ঞান। সে আল্লাহ প্রদত্ত বস্তুর দ্বারা ধন্য হয় এবং আল্লাহ প্রদত্ত গুণাবলীর দ্বারা গুণাণ্বিত হয়। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সে সুখী হয় অপরের সংস্রবকে সে অসুখকর মনে করে । আল্লাহর উপর ভরসা করে। আল্লাহর পরিচয় জ্ঞানের আলোকে সে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ পাকের জাত ও হেদায়েতের গুপ্ত তত্তরাজি তার আয়ত্ত হয়ে যায় এবং উল্লিখিত গুণাবলীর দ্বারা বিভূষিত হয়ে সে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে ও তাঁর হামদ এবং প্রশংসায় আত্মনিয়োগ করে।