পীরানে পীর দস্তগীর হযরত বড়পীর মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) বলেছেনঃ
- তুমি আল্লাহ পাকের মর্জী মোতাবেক যখন যে অবস্থায় থাকো, সে অবস্হা পরিত্যাগ করে ভাল বা মন্দ অন্য কোন অবস্হা অবলম্বন করতে যেওনা। যখন তুমি স্বাভাবিক অবস্হায় শাহী মহলের দ্বার দেশে পৌছে যাবে, তখনই তাঁর অভ্যন্তরে প্রবেশের ইচ্ছা করবে না। যে পর্যন্ত না প্রবেশ করার জন্য তোমাকে বাধ্য করা হয়, সে পর্যন্ত দরজায়ই দাড়িয়ে থাকো। অর্থাৎ তোমাকে বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়ার পূর্বে তুমি অভ্যান্তরে প্রবেশ করবে না। যদি তুমি প্রবেশ করার জন্য সাধারণ অনুমতি প্রাপ্ত হও, সেই অনুমতিকেই যধেষ্ট মনে করবে না। কেননা এরুপ অনুমতি বাদশাহর কোন পরীক্ষামুলক বা ছলনাস্বরুপও হতে পারে। অতএব যখন পর্যন্ত না তোমায় বাধ্য-বাধকতার সাথে প্রবেশ করানো হয়, তখন পর্যন্ত তুমি ধৈর্য্যবলম্বন করে যথাস্হানে অবস্হান করবে। অতঃপর যখন তুমি বাদশাহর অনুচরদের জবরদস্তির শিকার হয়ে শাহী মহলাভ্যন্তরে প্রবেশ করবে, তখন বাদশাহ তোমাকে এভাবে ভেতরে প্রবেশের জন্য কোন রুপ দোষারোপ করবেন না। কোনরুপ শাস্তিও দেবেন না। কেননা তোমার নিজের থেকে কোনরুপ স্বার্থ সিদ্ধির লোভের নিদর্শন প্রকাশ না পেলে বরং তুমি যে অবস্হায় ছিলে, ধৈর্য্য্বলম্বন করে সেই অবস্হায় থাকলে তোমার প্রতি কোনক্রমেই কোনরুপ শাস্তি বা সঙ্কট সৃস্টি হওয়া স্বাভাবিক বা সঙ্গত নয়।
- যাইহোক উল্লিখিতরুপে তুমি শাহী মহলে প্রবেশ করলে তোমার উদ্দেশ্য সফল হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকবে।শাহী মহলে প্রবেশ করে তুমি কোনরুপ উচ্চবাচ্চ্য না করে নীরব নিস্তব্ধভাবে অবনত মস্তকে বাদশাহের সম্মুখে দন্ডায়মান থাকবে। তোমার চোখ দুটো থাকবে অর্ধ নির্মিতাবস্তায়। এদিকে সেদিকে তাকাবে না। বরং পুরোপুরি ভাবে বাদশাহর প্রতি আদব রক্ষা করবে। অতঃপর বাদশাহ তোমাকে যে কাজে নিযুক্ত করেন, যথাযথভাবে মনে প্রাণে সেই দায়িত্ব পালন করবে। খুবই মনোযোগের সাথে কর্তব্য সমূহ সমাধা করবে। সহসাই পদোন্নতির জন্য লালায়িত হবে না, কেননা তাতে তুমি লোভী ব্যক্তি রুপে পরিচিত হবে। জেনে রাখো, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে লক্ষ্য করে ইরশাদ করেছেন, দুনিয়ায় কাফির মুশরিকদেরকে আমি যে জাকজমক, শান-শওকত, বিভিন্ন পার্থিব সম্পদ দান করেছি, তুমি সেগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করবে না। কেননা তাতে তুমি দুনিয়ার প্রতি লালায়িত বলে প্রতিপন্ন হবে। আমি শুধু তাদেরকে পরীক্ষা করার জন্যই ওগুলো তাদেরকে প্রদান করেছি। কিন্ত তোমাকে প্রকাশ্য ও অপকাশ্য যে অনুগ্রহ আমি প্রদান করেছি, তা ঐসব পfর্থিব সম্পদ থেকে বহু গুণে উত্তম এবং মূল্যবান। আল্লাহ পাকের এই বাণী তাঁর পক্ষ থেকে স্বীয় বাণী নবী করিম (সাঃ) কে তাঁর অবস্হার হেফাজত এবং তাকে যা দান করেছেন, তাতে তাঁর সন্তোস রক্ষা করার জন্যই শুনিয়েছিলেন।
- এ ছাড়া আল্লাহ পাক নবী করিম (সাঃ) কে লক্ষ্য করে আরও যে বলেছেন, আমি তোমাকে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে যে অনুগ্রহ প্রদান করেছি তা কাফিরদেরকে প্রদত্ত পার্থিব সম্পদ থেকে বহু গুণে উত্তম ও মূল্যবান। এ কথার মর্ম আল্লাহ পাক তাঁর প্রিয় নবীকে নেকী, নবুওয়ত, ইলম, সন্তোষ, ধৈর্য্য্, চারিত্রিক আদর্শ এবং শ্রেষ্ঠ ধর্ম ও দ্বীনের বাদশাহী প্রদান করেছেন। যা অন্য কাউকে দেয়া হয়নি। সুতরাং এই দান নিঃসন্দেহে কৃতজ্ঞতা ও খুশীর দাবীদার। আল্লাহ পাক যখন যে অবস্হায় রাখেন, তাতে খুশী থাকার কারণ এই যে, যদি তুমি আল্লাহ প্রদত্ত বর্তমান অবস্হায় ধৈর্য্য না ধরে অন্য অবস্হার জন্য উদ্বিগ্ন ও লালায়িত হয়ে পড়ো তবে সে ক্ষেত্রে নিজের তিনটি অবস্হার যে কোন একটি অবস্হা ঘটতে পারে। যেমন হয়ত বা তোমার নছীবে দ্বিতীয় অবস্হা আছে। অথবা তা তোমার নছীবে নেই বরং অন্যের ভাগ্যে আছে, আবার এমনও হতে পারে যে, তা তোমার বা অন্য কারোরই অদৃষ্টে নেই। এজন্যই যে ব্যাক্তি ধৈর্য্য হারিয়ে দ্বিতীয় অবস্থ লাভের জন্য অস্হির হয়ে পড়ে, স্বভাবতই সে তার মানষিক শান্তি এবং নিরুদ্বিগ্নতা নিজেই নষ্ট করে ফেলে। পক্ষান্তরে, সে যদি দ্বিতীয় অবস্হার দিকে না তাকিয়ে স্বীয় বর্তমান হাল বা অবস্হার উপরে রাজি এবং খুশি থাকে, তবে সে নানারুপ বিপদাপদ, সমস্যা এবং সঙ্কটে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
- এজন্য অবশ্যই তোমাকে নিজের অবস্হার উপর রাজী থাকতে হবে। তারপর যদি দ্বিতীয় অবস্হা তোমার অদৃষ্টে থাকে, তাহলে তুমি তার আকাঙক্ষী হও বা না হও, আপনা থেকেই তুমি তা পেয়ে যাবে। সুতরাং তা তুমি পাওয়ার জন্য অযথা ধৈর্য্য হারা হয়ে অবাঞ্চিত কার্যক্রমে লিপ্ত হয়ে পড়োনা। জেনে রাখো, যা তোমার অদৃষ্টে নেই তজ্জন্য আজীবন চেষ্টা করে তা লাভে সক্ষম হবে না। তাই এরুপ প্রত্যাশা করা ও লাভের চেষ্টা করা জ্ঞান ও বুদ্ধির দৃষ্টিতে হাস্যকর। অতএব এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে যেভাবে আল্লাহ তোমাকে রেখেছেন, তাতেই রাজী খুশি থাকা তোমার জন্য কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক।আর একটি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখবে, মালিক তোমাকে যেভাবে রাখেন, তাতে খুশী না থেকে যদি অন্য অবস্হার জন্য উদগ্রীব হও, তবে প্রকারন্তরে তা মালিকের সাথে বেয়াদবী ও ধৃষ্টতা প্রকাশ করা হয়। মহান আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার প্রতি নির্দ্ধারিত ব্যবস্হার ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য। যেমন আল্লাহ তোমাকে যে অবস্হায় যখন যা তোমার জন্য তিনি ভাল মনে করেন, তা অপছন্দ করলে আল্লাহর বিধানের প্রতি অবমাননা করা হয়। যা আল্লাহ পাকের অসন্তষ্টির বিশেষ কারণ, অতএব সেদিকে দৃষ্টিপাত করে সবারই উচিত নিজ নিজ বর্তমান হাল বা অবস্হার প্রতি সন্তষ্ট থেকে অন্য অবস্হার দিকে দৃষ্টিপাত না করে কালাতিপাত করতে থাকা। এর ফল এরুপ দাঁড়াবে যে, তোমার এরুপ আচরণে খুশী হয়ে আল্লাহ পাক তোমাকে উন্নত অবস্হায় পৌছে দিয়ে তোমার জন্য চিরস্হায়ী মঙ্গলের ব্যবস্হা করে দেবেন।